ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে ভেলা ডুবে চারজনের মৃত্যু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭
  • ২১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কলা গাছের ভেলা ডুবে দুই পরিবারের শিশু-নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে পূর্ব-বড়ুয়া গ্রামে ধরলা নদীর স্রোতে রবিবার বিকালে ভেলা ডুবে তারা নিখোঁজ হয়। রবিবার রাতে ও আজ সোমবার সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় জানান, কুলাঘাট ইউনিয়নের পূর্ব বড়ুয়া গ্রামে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকেই বসত বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। রবিবার বিকালে ওই এলাকার আবু হানিফ আলিফ তার ছেলে শিশু নাদিম বাবু, একই এলাকার মোজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী আছমা বেগম মিলে কলার ভেলায় করে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলেন। এসময় ধরলা নদীতে স্রোতে কলার ভেলা পানিতে ডুবে গেলে চারজনই নিখোঁজ হয়। পরে স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে রাতে শিশু নাদিম ও সোমবার ভোরে বাকিদের লাশ উদ্ধার করে।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি

উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট জেলায় পাঁচটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনিত হয়েছে। এতে জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার সঙ্কট। রবিবার বিকালে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার সকালে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি কমছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানালেও এখনও অনেক এলাকা জলমগ্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা পাড়ে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

হাতীবান্ধা উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারগুলো মহাসড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি এবং গোখাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি।

উপজেলা ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের সফির আলী বলেন, আমরা তিন দিন ধরে পানিবন্দি। এখনও কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মহাসড়কে তাবু টাঙিয়ে কোনো মতে না খেয়ে বেঁচে আছি।

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় রেলপথ ভেঙে যাওয়ার কারণে রবিবার সকাল থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে রেল যোগোযোগ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানির প্রবল বেগে ঝুঁকিতে রয়েছে মহাসড়কের একটি ব্রিজ। হাতীবান্ধা ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন মহসড়কের ওই ব্রিজটি যেকোন মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

হাতীবান্ধা রেল স্টেশনের অদূরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথের প্রায় ১০ ফিট জায়গা ভেঙে যায়। ফলে ওই পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকে পড়েছে। এতে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, থানা চত্বরের পাশাপাশি স্কুল কলেজে উঠেছে বন্যার পানি।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে রুটের ৭৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, জেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৯৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি আছে বলে আমরা ধরণা করছি। এসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লালমনিরহাটে ভেলা ডুবে চারজনের মৃত্যু

আপডেট টাইম : ০১:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কলা গাছের ভেলা ডুবে দুই পরিবারের শিশু-নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে পূর্ব-বড়ুয়া গ্রামে ধরলা নদীর স্রোতে রবিবার বিকালে ভেলা ডুবে তারা নিখোঁজ হয়। রবিবার রাতে ও আজ সোমবার সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় জানান, কুলাঘাট ইউনিয়নের পূর্ব বড়ুয়া গ্রামে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকেই বসত বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। রবিবার বিকালে ওই এলাকার আবু হানিফ আলিফ তার ছেলে শিশু নাদিম বাবু, একই এলাকার মোজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী আছমা বেগম মিলে কলার ভেলায় করে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলেন। এসময় ধরলা নদীতে স্রোতে কলার ভেলা পানিতে ডুবে গেলে চারজনই নিখোঁজ হয়। পরে স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে রাতে শিশু নাদিম ও সোমবার ভোরে বাকিদের লাশ উদ্ধার করে।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি

উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট জেলায় পাঁচটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনিত হয়েছে। এতে জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার সঙ্কট। রবিবার বিকালে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার সকালে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি কমছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানালেও এখনও অনেক এলাকা জলমগ্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা পাড়ে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

হাতীবান্ধা উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারগুলো মহাসড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি এবং গোখাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি।

উপজেলা ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের সফির আলী বলেন, আমরা তিন দিন ধরে পানিবন্দি। এখনও কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মহাসড়কে তাবু টাঙিয়ে কোনো মতে না খেয়ে বেঁচে আছি।

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় রেলপথ ভেঙে যাওয়ার কারণে রবিবার সকাল থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে রেল যোগোযোগ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানির প্রবল বেগে ঝুঁকিতে রয়েছে মহাসড়কের একটি ব্রিজ। হাতীবান্ধা ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন মহসড়কের ওই ব্রিজটি যেকোন মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

হাতীবান্ধা রেল স্টেশনের অদূরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথের প্রায় ১০ ফিট জায়গা ভেঙে যায়। ফলে ওই পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকে পড়েছে। এতে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, থানা চত্বরের পাশাপাশি স্কুল কলেজে উঠেছে বন্যার পানি।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে রুটের ৭৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, জেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৯৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি আছে বলে আমরা ধরণা করছি। এসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।